ছাগলের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা

ডায়রিয়া (Diarrhea) বা পাতলা পায়খানা ছাগলের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা, যা নানা কারণে হতে পারে। এটি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তবে শরীরে পানিশূন্যতা (Dehydration) তৈরি করে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

কারণ:

ডায়রিয়া সাধারণত সংক্রমণজনিত, পুষ্টিগত বা পরিবেশগত কারণে হতে পারে।

১. জীবাণুর সংক্রমণজনিত কারণ:

ব্যাকটেরিয়া:

  • Escherichia coli (E. coli) – বাচ্চা ছাগলের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ।
  • Salmonella spp. – রক্তাক্ত পাতলা পায়খানা হতে পারে।
  • Clostridium perfringens – খাদ্য বিষক্রিয়ার কারণে দ্রুত মৃত্যু ঘটাতে পারে (Enterotoxemia)।

ভাইরাস:

  • RotavirusCoronavirus – সাধারণত বাচ্চা ছাগলে বেশি হয়।

পরজীবী (কৃমি ও প্রোটোজোয়া):

  • Coccidia (Eimeria spp.) – পাতলা ও রক্তাক্ত ডায়রিয়া হতে পারে।
  • পাকস্থলী ও অন্ত্রের কৃমি (Roundworm, Tapeworm) – দীর্ঘস্থায়ী পাতলা পায়খানা সৃষ্টি করতে পারে।

২. খাদ্যজনিত কারণ:

হঠাৎ খাদ্য পরিবর্তন: নতুন খাবারে দ্রুত অভ্যস্ত হতে না পারলে ডায়রিয়া হতে পারে।
অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার: যেমন ভুট্টা, গম, ও অন্যান্য দানাদার খাবার বেশি খেলে।
বিষাক্ত ঘাস বা পঁচা খাবার: ছত্রাকযুক্ত ঘাস বা দূষিত খাবার খেলে।
দুধ হজমের সমস্যা: বাচ্চা ছাগলের ক্ষেত্রে গরুর দুধ বা অতিরিক্ত দুধ খেলে হতে পারে।


৩. পরিবেশগত কারণ:

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নোংরা পানি পান করা।
বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বা ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হওয়া।

লক্ষণ:

ডায়রিয়ার তীব্রতা ও ধরণ অনুযায়ী লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে।

পাতলা, দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা (অনেক সময় পানি বা রক্ত মিশ্রিত)।
শরীরে পানিশূন্যতা (Dehydration) – গা ঢিলে হয়ে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া, ত্বক শুকিয়ে যাওয়া।
খাবার কম খাওয়া ও ওজন কমে যাওয়া।
নিতম্ব ও লেজ নোংরা হয়ে যাওয়া।
শক্তিহীনতা, দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হওয়া।
কিছু ক্ষেত্রে বমি হওয়া।
জ্বর (ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে)।

চিকিৎসা:

১. পানিশূন্যতা রোধ (Hydration Therapy):

ওআরএস (ORS) বা ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণ:

  • ১ লিটার পানির সাথে ১ চামচ লবণ ও ২ চামচ গ্লুকোজ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার খাওয়াতে হবে।
  • ডায়রিয়া গুরুতর হলে রিঙ্গার ল্যাকটেট (Ringer’s Lactate) বা নরমাল স্যালাইন ইনজেকশন দিতে হবে।

২. সংক্রমণ প্রতিরোধে ওষুধ:

অ্যান্টিবায়োটিক (ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে):

  • সালফাড্রাগ (Sulfaquinoxaline বা Sulfamethazine) – ককসিডিয়াসিসে কার্যকর।
  • অক্সিটেট্রাসাইক্লিন (Oxytetracycline) – সংক্রমণের ক্ষেত্রে কার্যকর।
  • নিওমাইসিন (Neomycin) – অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য ভালো।

পরজীবী সংক্রমণে:

  • টলট্রাজুরিল (Toltrazuril) বা এমপ্রোলিয়াম (Amprolium) – ককসিডিয়াসিসের জন্য।
  • এলবেনডাজল (Albendazole) বা ফেনবেনডাজল (Fenbendazole) – কৃমির চিকিৎসায়।

৩. খাবার ও পুষ্টি:

দুধ কমিয়ে উষ্ণ পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট মিশ্রণ খাওয়ানো।
দ্রুত হজম হয় এমন খাবার দেওয়া (যেমন – নরম খড়, শুকনো ঘাস)।
প্রোবায়োটিক (Probiotics) ও মাল্টিভিটামিন দেওয়া।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ:

পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।
সঠিক পুষ্টি ও বিশুদ্ধ খাবার-পানি সরবরাহ করা।
নিয়মিত কৃমির ওষুধ দেওয়া (প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর)।
বাচ্চা ছাগলকে কম বয়সে ককসিডিয়া প্রতিরোধী ওষুধ দেওয়া।
খাদ্য পরিবর্তন ধাপে ধাপে করা, একবারে নতুন খাবার না দেওয়া।

Scroll to Top