লাম্পি স্কিন ডিজিজ (LSD)

লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি চর্মরোগ।

রোগের লক্ষণ

  • প্রথম পর্যায়ে আক্রান্ত প্রাণীর জ্বর ১০৪-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়, খাবার গ্রহণে অরুচি দেখা দেয়।
  • আক্রান্ত প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গোলাকার গুটি বা ফোস্কা দেখা দেয়।
  • পায়ে এবং শরীরের নিম্নাংশে ফুলে পানি জমা হয় এবং প্রাণী খুঁড়িয়ে হাটে।
  • শেষ পর্যায়ে কয়েকটি গুটি বা ফোস্কা ফেটে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়।

রোগটি কিভাবে ছড়ায়

  • মশা, মাছির, আঠালী ও মাইটের মাধ্যমে রোগটি দ্রুত এক প্রাণী হতে অন্য প্রাণীতে ছড়ায়।
  • আক্রান্ত প্রাণী এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিবহনের মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে।
  • এছাড়া আক্রান্ত প্রাণীর লালা, দুধ এবং আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে এর মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত প্রাণী পরিচর্যাকারী, চিকিৎসক বা ভ্যাক্সিন প্রদানকারীর মাধ্যমেও রোগটি অন্য সুস্থ্য প্রাণীতে ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত প্রাণীর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির (যেমন সিরিঞ্জ, খাদ্য ও পানির পাত্র ইত্যাদি) মাধ্যমে রোগটি অন্য প্রাণীতে ছড়াতে পারে।

রোগের কারণে ক্ষতি

  • আক্রান্ত গাভীর দুধের উৎপাদন কমে যায়, গর্ভপাত হয়, ওজন অনেকাংশে কমে যায় এমনকি বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
  • চামড়ার গুনাগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং মৃত্যুর হার ৫-১০%। তবে সঠিক পরিচর্যা ও দ্রুত নিলে মৃত্যুর ঝুঁকি নেই।

রোগ নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ

  • খামার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
  • খামারে জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কীটপতঙ্গ, মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণ করা।
  • খামারে আক্রান্ত প্রাণীর জন্য মশারির ব্যবস্থা করা এবং আক্রান্ত প্রাণী দ্রুত অন্য স্থানে সরিয়ে পৃথক ভাবে চিকিৎসা ও পরিচর্যা করা।
  • আক্রান্ত অঞ্চলে প্রাণীর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা এবং সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত চারণ ভূমিতে না নেওয়া।
  • আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষতস্থান চিংচার আয়োডিন, পভিসেপ অথবা ০.১% পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট দ্বারা সকাল বিকাল ধৌত করা।
  • ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য জিংক ও ভিটামিন-সি খাওয়ানো।

চিকিৎসা

  • যেহেতু ভাইরাস দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয় কাজেই কোন এন্টিবায়োটিক এ রোগে কোন কাজ করে না, উপরন্ত এন্টিবায়োটিক
    ব্যবহারের ফলে প্রাণী দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য:
  • প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। খাবার সোডা-৫০ গ্রাম, নিমপাতা বাটা-২৫ গ্রাম, লবণ-২৫ গ্রাম, গুড়-৫০ গ্রাম প্রতি লিটার
    পানিতে একত্রে মিশ্রিত করে সকাল-বিকাল ৭ দিন সেবন করালে লাম্পি স্কিন ডিজিজ থেকে উপশম পাওয়া যায়।
  • এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ আক্রান্ত গরু

প্রতিরোধ

  • আক্রান্ত প্রাণী সুস্থ্য হয়ে যাওয়ার পর তার শরীর থেকে ইমিউন সিরাম নিয়ে প্রতি ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১০ সিসি, সুস্থ্য গরুর
    মাংসে ৭ দিন পর পর ৩ বার প্রয়োগ করলে এ রোগ প্রতিরোধ হয়।
  • সুস্থ্য গরুকে এ রোগের ভ্যাকসিন (টীকা) প্রদান করতে হবে।
  • খামারে সকালে ও বিকালে ভাল মানের জীবানুনাশক দ্বারা স্প্রে করতে হবে।
Scroll to Top