ছাগলের পিপিআর রোগ – কারণ, লক্ষন,প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

ছাগলের পিপিআর রোগ একটি মরণঘাতি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে গবাদিপশুর মুখ থেকে হলুদে এক ধরনের পদার্থ নিঃসৃত হতে দেখা দেয়, ছাগলের জ্বর আসে, ডাইরিয়া হয়, শ্বাসকষ্ট হয় ইত্যাদি লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে ছাগলের মৃত্যুর হার প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হয়ে থাকে। আবার এই রোগের চিকিৎসা করাতে গেলে খরচও বেড়ে যায়। যার কারণে একবার ছাগলের খামারে পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগল চিহ্নিত হয়, সেক্ষেত্রে খামারিদের বড় একটি লোকসানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

কারণ

ছাগলের পিপিআর রোগ একটি ভাইরাস জনিত রোগ। যে ভাইরাসটির কারণে ছাগলের পিপিআর রোগ হয় সেটি হচ্ছে মরবিলি ভাইরাস। ছাগলের লালা, নাক বা মুখ থেকে বের হওয়া তরল পদার্থ ইত্যাদি থেকে রোগটির ভাইরাস ছাড়িয়ে থাকে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এই রোগটি ছড়ানোর বড় একটি কারণ।

লক্ষণ

  1. হঠাৎ করেই ছাগলের জ্বর আসে। ছাগলের পুরো শরীর গরম হয়ে যায়। তাপমাত্রা ১০৫ থেকে ১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে হতে পারে।
  2. ছাগলের নাক, কান, মুখ এমনকি চোখ থেকেও এক ধরনের গাঢ় তরল পদার্থ বের হতে থাকে। এই তরল পদার্থটি কয়েকদিন পর আরো গাঢ় হয়ে হলদে এক ধরনের পদার্থে রূপ নেয়।
  3. নাক থেকে নিঃসৃত হওয়া হলদে পদার্থটির কারণে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার দরুন ছাগলের শ্বাসকষ্ট হয়।
  4. পিপিআর রোগের আরেকটি বড় লক্ষণ হচ্ছে আক্রান্ত ছাগলটি ডায়রিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে যায়।
  5. ছাগলে জিহ্বা, দাঁত, মুখের তালু ইত্যাদি নরম অংশে এক প্রকার ক্ষুদ্র ঘা দেখতে পাওয়া যায়, যা সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব।
  6. ছাগলের চোখও এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। ছাগলের চোখ থেকে এক ধরনের সাদা পদার্থ বের হতে থাকে, যা চোখকে অনেক সময় ঢেকে রাখতে পারে।
  7. পিপিআর রোগে আক্রান্ত হলে ছাগলটির ওজন খুব দ্রুততার সাথে কমতে থাকে।

পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগলের লক্ষণ

চিকিৎসা

ছাগলের পিপিআর রোগ একটি মরণঘাতি রোগ। এ রোগ থেকে কোনো ছাগলের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তারপরেও যদি আপনি কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ছাগলের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

  • এন্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী সংক্রমণ রোধ করতে হবে। এতে মৃত্যুর হার যথাসম্ভব কমানো যায়।
  • অক্সিটেট্রাসাক্লিন ও ক্লোর টেট্রাসাইক্লিন নামক দুটি রোগ ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ দুটি ওষুধ শ্বাসতন্ত্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
  • ফুড থেরাপি এবং জীবাণুরোধী ওষুধ, যেমন: ইনরোফ্লোক্সাসিন, সেফটিফোর নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করতে চিকিৎসকেরা পরামর্শ নিতে হবে।
  • ছাগলের মুখের ক্ষত সারানোর জন্য ৪.৫% বরো-গ্লিসারিন দিয়ে মুখ ধুয়ে দিতে হবে।
  • চোখের চারপাশে, নাক, মুখ সর্বদাই পরিষ্কার রাখতে হবে। এর জন্য পরিষ্কার কাপড় এবং কটন টিউব ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে চারবার কাজটি করতে হবে।

প্রতিরোধ

পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করাই ছাগলের পিপিআর রোগের প্রতিরোধের কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে। নিয়মিত ছাগলকে পিপিআর রোগ প্রতিরোধের টিকা প্রয়োগ করলে ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই খামারিদের উচিত প্রতি ছয়মাস পর পর পিপিআর রোগ প্রতিরোধী টিকাটি ছাগলের উপর প্রয়োগ করা। 

এর পাশাপাশি যদি কোনো ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে দেরি না করে ছাগলটিকে অন্য ছাগলদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখতে হবে। পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগলের মুখ, নাক, দাঁত, চোখ ইত্যাদি থেকে নিঃসৃত পদার্থটি মাটিতে পড়লে তা দ্রুতই অপসারণ করতে হবে এবং পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগল মারা গেলে ছাগলের দেহটি দূরে কোথাও মাটির গভীরে চাপা দিতে হবে। 

পিপিআর রোগটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ, তাই অন্যান্য সুস্থ ছাগল যাতে এই ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসে সেজন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এছাড়া ছাগল রাখার স্থানটি প্রতিনিয়তই জীবাণুননাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।

Scroll to Top