ছাগলের নিউমোনিয়া: কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

নিউমোনিয়া ছাগলের জন্য একটি গুরুতর শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগ, যা দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে। এটি প্রধানত ঠান্ডা আবহাওয়া, জীবাণু সংক্রমণ ও পরিবেশগত কারণের ফলে হয়ে থাকে।

নিউমোনিয়ার কারণ:

নিউমোনিয়া সাধারণত তিন ধরনের কারণে হতে পারে—

১. ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া

Pasteurella multocidaMannheimia haemolytica ব্যাকটেরিয়া প্রধান কারণ।
ঠান্ডা, ধুলোবালি, সংক্রমিত ছাগলের সংস্পর্শে এলে ছড়িয়ে পড়ে।

২. ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া

Parainfluenza-3 (PI-3), Adenovirus, এবং Respiratory Syncytial Virus সংক্রমণের ফলে হয়।
সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিশে জটিল নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে।

৩. পরিবেশগত ও অন্যান্য কারণ

✔ হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন (ঠান্ডা-গরমের ওঠানামা)।
✔ অতিরিক্ত ভিড় বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
✔ ধুলোবালি ও গ্যাসযুক্ত পরিবেশ।
✔ দীর্ঘ সময় বৃষ্টিতে ভিজে থাকা বা ঠান্ডায় বসবাস।

নিউমোনিয়ার লক্ষণ:

নিউমোনিয়ার লক্ষণ প্রথমে সাধারণ ঠান্ডার মতো মনে হলেও, দ্রুত অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে।

প্রাথমিক লক্ষণ:

✔ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া (১০৪-১০৬°F)।
✔ নাক দিয়ে সর্দি ও পুঁজ বের হওয়া।
✔ কাশি ও গলায় গুরুগুরু শব্দ হওয়া।
✔ ক্ষুধামন্দা ও পানি কম খাওয়া।

গুরুতর লক্ষণ:

✔ দ্রুত শ্বাস নেওয়া (হাঁপানি ভাব)।
✔ শ্বাসকষ্ট (নাক ফাঁপিয়ে শ্বাস নেওয়া)।
✔ চোখ ও নাক দিয়ে ঘন পুঁজ বের হওয়া।
✔ শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা।
✔ মারাত্মক ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটতে পারে।

চিকিৎসা:

১. অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ (ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার জন্য)

অক্সিটেট্রাসাইক্লিন (Oxytetracycline) – ১০ মিগ্রা/কেজি ওজন অনুযায়ী ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন।
এমপেনিসিলিন (Ampicillin) – সংক্রমণ দমনে কার্যকর।
সালফোনামাইড (Sulfonamides) – নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

২. প্রদাহ ও জ্বর কমানোর ওষুধ

প্যারাসিটামল (Paracetamol) – জ্বর কমাতে ব্যবহার করা হয়।
ফ্লুনিক্সিন মেগলুমিন (Flunixin meglumine) – প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে ব্যবহার হয়।

৩. শ্বাসকষ্ট কমানোর ব্যবস্থা

আক্রান্ত ছাগলকে পরিষ্কার ও উষ্ণ স্থানে রাখতে হবে।
ধুলাবালি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট (বিশেষ করে ভিটামিন A, C ও D) দিলে দ্রুত সেরে ওঠে।

প্রতিকার ও প্রতিরোধ:

ছাগলকে ঠান্ডা ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখা।
গরমে বা শীতে আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
নিয়মিত টিকা ও ওষুধ প্রদান।
সঠিক পুষ্টি ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা।
অসুস্থ ছাগলকে দ্রুত আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া।

Scroll to Top