বাংলাদেশের খামারগুলোতে মুরগির নানা ধরনের রোগ দেখা যায়, যার মধ্যে নিউক্যাসেল, টাইফয়েড, এবং মাইকোপ্লাজমোসিস (CRD) অন্যতম। এই রোগগুলো দ্রুত ছড়ায়, উৎপাদন কমায় এবং মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই খামারিদের জন্য এই রোগগুলোর বিস্তারিত জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি।
১. নিউক্যাসেল ডিজিজ (Newcastle Disease – ND)
কারণ:
এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা Paramyxovirus দ্বারা সৃষ্ট। এটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং দ্রুত ছড়ায়।
লক্ষণ:
- 
হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট
 - 
মাথা ও গলা কাত হয়ে যাওয়া (Torticollis)
 - 
খাওয়ার রুচি হ্রাস
 - 
ডিম উৎপাদন হ্রাস
 - 
হঠাৎ মৃত্যু, বিশেষ করে বাচ্চা মুরগিতে
 
চিকিৎসা:
- 
ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ নেই
 - 
লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা: গরম পানিতে ভিটামিন C, ইলেক্ট্রোলাইট
 - 
সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ (ভেটেরিনারিয়ান পরামর্শে)
 
প্রতিকার:
- 
টিকা প্রদান:
- 
ND–B1: ৫–৭ দিনের মধ্যে মুখে বা পানিতে
 - 
ND–LaSota: ২১ দিনে
 - 
ND–Killed Vaccine: ৬–৮ সপ্তাহে
 
 - 
 - 
জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা
 - 
আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা রাখা
 
২. টাইফয়েড (Salmonellosis)
কারণ:
Salmonella Gallinarum ও S. Pullorum নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। এটি বাচ্চা ও বড় উভয় বয়সের মুরগিতে হতে পারে।
লক্ষণ:
- 
ডায়রিয়া (সাদা বা সবুজ পায়খানা)
 - 
দুর্বলতা, ওজন হ্রাস
 - 
ডিমের খোসা পাতলা ও বিকৃত
 - 
হঠাৎ মৃত্যু
 - 
বাচ্চা মুরগির মৃত্যুহার বেড়ে যায়
 
চিকিৎসা:
- 
অ্যান্টিবায়োটিক: অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সালফাড্রাগ (ভেটেরিনারিয়ান পরামর্শে)
 - 
ইলেক্ট্রোলাইট ও ভিটামিন C খাওয়ানো
 
প্রতিকার:
- 
ভ্যাকসিন: S. Gallinarum–নির্ভর টিকা নির্দিষ্ট বয়সে দেওয়া
 - 
ব্রুডার হাউজ ও ডিম পরিষ্কার রাখা
 - 
ব্যাচ ব্যবস্থাপনায় পুরাতন ও নতুন মুরগি আলাদা রাখা
 - 
খাবার ও পানিতে জীবাণুনাশক মেশানো
 
৩. মাইকোপ্লাজমোসিস (CRD – Chronic Respiratory Disease)
কারণ:
Mycoplasma gallisepticum নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। এটি ধীরে ধীরে সংক্রমণ ঘটায়, তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে।
লক্ষণ:
- 
নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি
 - 
গলার শব্দ (গড়গড়)
 - 
চোখে পানি বা ফোলা
 - 
ডিম উৎপাদন কমে যায়
 - 
দুর্বলতা ও ওজন হ্রাস
 
চিকিৎসা:
- 
অ্যান্টিবায়োটিক: টাইলোসিন, টিলমিকোসিন, ডক্সিসাইক্লিন
 - 
ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ (ডাক্তারের পরামর্শে)
 - 
ইলেক্ট্রোলাইট ও মাল্টিভিটামিন
 
প্রতিকার:
- 
ভ্যাকসিন: প্রয়োজনে MG ভ্যাকসিন প্রয়োগ
 - 
খামারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
 - 
ঠাণ্ডা ও ধূলিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা
 - 
আক্রান্ত পাখি আলাদা রাখা
 
এই ৩টি রোগ মুরগির উৎপাদন ও খামারের লাভজনকতা নষ্ট করতে পারে যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। তাই, নিয়মিত টিকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এবং সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেই খামারকে রক্ষা করা সম্ভব।
