গরুর নিউমোনিয়া একটি সাধারণ এবং গুরুতর রোগ, যা মূলত শ্বাসনালির সংক্রমণের ফলে ঘটে। এটি সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, বা পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে এবং দ্রুত সংক্রমিত হলে গরুর জন্য মারাত্মক হতে পারে।
নিউমোনিয়ার কারণ
গরুর নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে:
- ব্যাকটেরিয়া:
- Pasteurella multocida, Mannheimia haemolytica
 - এটি নিউমোনিয়ার জন্য সবচেয়ে সাধারণ ব্যাকটেরিয়া।
 
 - ভাইরাস:
- Bovine Respiratory Syncytial Virus (BRSV), Parainfluenza-3 virus (PI-3)
 - এই ভাইরাসগুলো শ্বাসনালির উপর প্রভাব ফেলে এবং সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের সাথে যুক্ত হয়।
 
 - পরিবেশগত কারণ:
- ঠান্ডা, আর্দ্র, এবং দম বন্ধ পরিবেশ গরুকে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
 
 - স্ট্রেস:
- দীর্ঘ সময় ধরে গরুকে এক জায়গায় আটকে রাখা বা পরিবহণের সময় স্ট্রেস গরুর শ্বাসযন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
 
 - নির্মল বাতাস বা মশার উপদ্রব:
- দূষিত বা ভারী বাতাসও নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে।
 
 
নিউমোনিয়ার লক্ষণ
গরুর নিউমোনিয়া শুরু হলে সাধারণত নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায়:
✔ শ্বাসকষ্ট: গরু দ্রুত শ্বাস নেয় এবং গভীরভাবে শ্বাস ফেলে।
✔ কাশি: শুকনো বা মিউকাসযুক্ত কাশি হতে পারে।
✔ জ্বর: শরীরের তাপমাত্রা ১০২-১০৪°F (৩৯-৪০°C) পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
✔ খাওয়ার অনীহা: গরু খাবার কম খায় বা একেবারে খায় না।
✔ লালা ঝরা: মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়া।
✔ নাক থেকে পানি বা মিউকাস বের হওয়া: নাক দিয়ে তরল নিঃসরণ হতে পারে।
✔ দুর্বলতা ও হতাশা: গরু খুবই দুর্বল হয়ে যায় এবং দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট পায়।
✔ পেট ফুলে যাওয়া: বিশেষ করে গুরুতর নিউমোনিয়ায় গরুর পেট ফুলে যেতে পারে।
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা
গরুর নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা রোগের ধরন ও লক্ষণের ওপর নির্ভর করে।
১. অ্যান্টিবায়োটিক:
ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া:
- Oxytetracycline, Amoxicillin, Cephalosporins
 - এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া নিরোধক অ্যান্টিবায়োটিক গরুর শ্বাসনালির সংক্রমণ কমাতে সহায়ক।
 
২. ভাইরাস প্রতিরোধক চিকিৎসা:
ভাইরাসের জন্য বিশেষ কোনো অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই, তবে ভাইরাল নিউমোনিয়া সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের সাথে যুক্ত থাকে।
- এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ঠেকাতে।
 
৩. স্টেরয়েডস:
স্টেরয়েডস শ্বাসনালীতে সোজা অক্সিজেন প্রবাহের উন্নতি করতে এবং প্রদাহ কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. ব্যথানাশক:
যদি গরু অতিরিক্ত কষ্ট পায়, তবে ব্যথানাশক যেমন Flunixin meglumine প্রয়োগ করা হয়।
৫. অক্সিজেন থেরাপি:
যদি গরুর শ্বাসকষ্ট গুরুতর হয়ে থাকে, তবে অক্সিজেন থেরাপি ব্যবহার করে গরুকে শ্বাস নিতে সাহায্য করা হয়।
৬. তরল ও ইলেকট্রোলাইটস:
পানি ও ইলেকট্রোলাইট (ORS) গরুকে পুনরায় শক্তি ও সঠিক পানি সরবরাহ করতে সাহায্য করে, বিশেষত যদি গরু ডিহাইড্রেটেড হয়ে থাকে।
গরুর নিউমোনিয়া প্রতিরোধ
নিউমোনিয়া প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে:
১. পরিষ্কার ও শুষ্ক পরিবেশ নিশ্চিত করা:
গরুর আশ্রয়স্থল সুরক্ষিত, শুষ্ক এবং পরিষ্কার রাখা।
খামারের গতি পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করা।
২. ভ্যাকসিনেশন:
Bovine Respiratory Syncytial Virus (BRSV) ও Parainfluenza-3 (PI-3) এর জন্য টিকা দেওয়া।
কিছু ক্ষেত্রে Mannheimia haemolytica বা Pasteurella multocida এর জন্য টিকা দেওয়া হতে পারে।
৩. স্ট্রেস কমানো:
পরিবহন, জমায়েত বা ভারী কাজের সময় গরুর স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করা।
খাদ্য ও পানির সরবরাহ নিশ্চিত করে রাখা।
৪. সঠিক পুষ্টি:
গরুকে যথাযথ পুষ্টি প্রদান করা, যাতে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বিশেষ করে, ভিটামিন এ, ডি ও ই এবং সেলেনিয়াম গরুর শ্বাসযন্ত্রের সুরক্ষায় সহায়ক।
৫. দ্রুত চিকিৎসা:
রোগের প্রথম লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা।
আলাদা করে আক্রান্ত গরুকে পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা দেওয়া।
