গরুর কৃমি সংক্রমণ একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা, যা গরুর স্বাস্থ্য ও উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কৃমির সংক্রমণের ফলে গরুর ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন কমে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে গরুর মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই কৃমি সংক্রমণের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা গরুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গরুর কৃমির সংক্রমণের প্রধান কারণ
- অপরিষ্কার পানি পান করা
 - দূষিত ঘাস বা খাবার খাওয়া
 - অন্য সংক্রমিত গরুর সংস্পর্শে আসা
 - নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ না খাওয়ানো
 - দূষিত স্থানে গরুর মল-মূত্র পড়ে থাকা
 
গরুর কৃমি রোগের লক্ষণ
সাধারণ লক্ষণ:
- ওজন কমে যাওয়া
 - দুর্বলতা ও অবসাদ
 - খাওয়ার অনীহা
 - রক্তশূন্যতা
 

গরুর কৃমির চিকিৎসা
গরুর কৃমির সংক্রমণ হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করা জরুরি।
১. কৃমিনাশক ওষুধ
অ্যালবেনডাজল (Albendazole):
- গোলকৃমি ও ফিতাকৃমির চিকিৎসায় কার্যকর
 - মুখে খাওয়ানোর সিরাপ বা ট্যাবলেট হিসেবে দেওয়া হয়
 
লেভামিজোল (Levamisole):
- বিভিন্ন ধরনের গোলকৃমির সংক্রমণ দূর করতে ব্যবহার হয়
 
আইভারমেকটিন (Ivermectin):
- চর্মকৃমি ও ফুসফুসের কৃমি দূর করতে কার্যকর
 
ট্রিকলবেনডাজল (Triclabendazole):
- যকৃৎ ফ্লুক (Liver Fluke) সংক্রমণ দূর করতে ব্যবহৃত হয়
 
২. কৃমির সংক্রমণের মাত্রার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা:
 হালকা সংক্রমণ হলে: সাধারণ কৃমিনাশক প্রয়োগেই নিরাময় হয়
গুরুতর সংক্রমণ হলে:
- পশু চিকিৎসকের পরামর্শে ডোজ বাড়ানো হতে পারে
 - প্রয়োজন হলে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়
 
গরুর কৃমি প্রতিরোধের উপায়
১. নিয়মিত কৃমিনাশক প্রয়োগ
জন্মের ১৫ দিন থেকে ১ মাস বয়সে প্রথম কৃমিনাশক প্রয়োগ করা উচিত
এরপর ৩ মাস পরপর কৃমিনাশক দেওয়া উচিত
 গরুর বয়স অনুযায়ী ওষুধের ডোজ ঠিক করতে হবে
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
খামার, গোয়ালঘর ও খাবারের স্থান পরিষ্কার রাখা
কৃমিযুক্ত গরুর মল পরিষ্কার করে মাটিতে পুঁতে ফেলা
 দূষিত পানি বা জলাশয় থেকে গরুকে পানি পান করতে না দেওয়া
৩. সংক্রমিত গরুকে আলাদা রাখা
কৃমির সংক্রমণ ধরা পড়লে গরুটিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে চিকিৎসা করা উচিত
৪. সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা
গরুকে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও খনিজযুক্ত খাবার দিতে হবে
 সংক্রমণ প্রতিরোধে কৃমিনাশক ওষুধের পাশাপাশি ভিটামিন-মিনারেল দেওয়া উচিত
